রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন
সানোয়ার হাসান সুনু::
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার বিশুদ্ধ পানির গভীর নলকূপ স্হাপন প্রকল্প ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি লেট্রিন স্হাপন প্রকল্পের কাজ বর্তমানে শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সুত্র জানায়, ইতিমধ্যে জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের অভাবগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ৫৮৫০টি নলকূপ ও ৮৮৩০টি স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটারি লেট্রিন স্হাপন করা হয়েছে। এর ফলে এ দু’ উপজেলার প্রায় ৮০ হাজার মানুষের বিশুদ্ধ পানির অভাব দূর হলো এবং স্বাস্থ্যকর লেট্রিনের ব্যবস্হা হলো। ফলে দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ বিশুদ্ধ পানির গভীর নলকুপ ও স্বাস্থ্য সম্মত লেট্রিন পেয়ে খুবই খুশি।
আগে যেখান বছরে ৫০থেকে ৬০টি নলকুপ আসতো সেখানে এখন হাজার হাজার গভীর নলকুপ ও লেট্রিন স্হাপন যুগান্তকারী ঘটনা হিসাবে দেখছেন এ দু উপজেলার মানুষ। আর এটা সম্ভব হয়েছে স্হানীয় এমপি পরিকল্পনা মন্ত্রী আলহাজ্ব এম এ মান্নানের আন্তরিক উদ্যোগের ফলে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুর রব সরকারের মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক তদারকি ও মনিটরিং এর ফলে কাজ ও মানসম্মত টেকসই হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানান।
নদীনালা, খালবিল হাওর বেস্টিত এ উপজেলায় দীর্ঘ দিন ধরে বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্য সম্মত লেট্রিনের অভাবে নিম্ন আয়ের সাধারণ গরীব মানুষ নিরুপায় হয়ে খালবিল ও পুকুরের পানি পান করতে বাধ্য হতেন অনেকেই চটের বস্তা দিয়ে টয়লেট বানিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাদের টয়লেটের কাজ সারতেন। অনেকেই আবার পাশ্ববর্তী বাড়ীর টিউবওয়েল থেকে পানি এনে পান করতেন। একটি টিউবওয়েলের জন্য আবেদন করে মাসের পর মাস সরকারের অফিসে আসা যাওয়া করতেন কিন্তুু ভাগ্যে টিউবওয়েল পাওয়া ছিল সোনার হরিন। এই অবস্হায় ২০১৯ সনের এপ্রিলে এ দুই উপজেলার বিশুদ্ধ পানির অভাব দূর করতে ও লেট্রিন সমস্যার সমাধানে অত্র এলাকার এমপি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান একটি মেগা প্রকল্প গ্রহন করেন। এ মাসেই বিশুদ্ধ পানির নলকুপ স্হাপন প্রকল্প ও লেট্রিন প্রকল্পের জন্য ১০০ কোটিটাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫০ কোটিটাকা জগন্নাথপুর উপজেলার জন্য ও ৫০ কোটিটাকা শান্তিগন্জ্ঞ উপজেলার জন্য বরাদ্ধ দেওয়ার পর ওই মাস থেকেই এ দু উপজেলায় দ্রুত কাজ শুরু হয়।
এর মধ্যে প্রায় ২৬ কোটিটাকা ব্যয়ে জগন্নাথপুর পৌর সভার জন্য পানির ট্যাংক স্হাপন প্রকল্পের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের প্রায় ৩০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পৌর এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ উপকৃত হবে। পৌরশহরে ড্রেনেজের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পানির লাইনের কাজ ও চলছে।
উপজেলার আশারকান্দি, রানীগঞ্জ, পাটলী ও ছিলাউরা হলদিপুর ইউনিয়নে মোট ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকার কাজ চলছে। প্রতিটি ইউনিয়নে দেওয়া হয়েছে ২কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা করে। ইতি মধ্যেই ইউনিয়ন গুলোর প্রায় ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্হানীয় এমপি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের সাথে আলাপ হলে তিনি যুগান্তর কে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যকর লেট্রিনের অভাবে নানা সমস্যায় ছিলেন। অনেকেই খালবিলের পানি খেয়ে পেটের অসুখে ভোগতেন। এখন আর এ সমস্যা নেই। আমরা ১০০ কোটিটাকার মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ পানির গভীর নলকুপ ও লেট্রিন দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে গরীব লোকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আগে গরীব লোকজন একটি টিউবওয়েলের জন্য মাসের পর মাস সরকারী অফিসে ঘুরাফেরা করতেন। এখন আমাদের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের লোকজন বাড়ী বাড়ী গিয়ে টিউবওয়েল ও লেট্রিন স্হাপন করছেন।
আমাদের দু উপজেলাতেই প্রচুর দরিদ্র লোক রয়েছেন। আগামী তে আরো বরাদ্ধ দিয়ে সবার ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ পানির নলকুপ ও স্বাস্থ্য সম্মত লেট্রিনের ব্যবস্হা করে দেবো। যাতে মানুষ স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ও শান্তিগন্জ্ঞের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুর রব সরকার বলেন, জগন্নাথপুর ও শান্তিগন্জ্ঞ উপজেলায় প্রচুর গরীব মানুষ রয়েছেন। বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটারি লেট্রিনের খুবই সংকট ছিল।
২০০৮ সনে আমি যখন এখানে আসি তখন বছরে ৪০থেকে ৫০টি টিউবওয়েল পাওয়া যেত চাহিদা ছিল প্রচুর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সবাইকে দেওয়া সম্ভব হতো না।
২০১৯ সনে অত্র এলাকার এমপি মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ দু উপজেলার বিশুদ্ধ পানি ও লেট্রিনের অভাব দূর করতে ১০০ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প গ্রহন করলে আমরা দু উপজেলার মানুষের বাড়ী বাড়ী গিয়ে দরিদ্র মানুষদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিশুদ্ধ পানির গভীর নলকূপ ও স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটারি লেট্রিন স্হাপনের কাজ শুরু করি। এ পর্যন্ত জগন্নাথপুর ও শান্তিগন্জ্ঞ উপজেলায় প্রায় ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলায় ২৫০০টি গভীর নলকুপ স্হাপন এবং ৪৮৮০টি স্যানিটারি লেট্রিন নির্মান করা হয়েছে। শান্তিগঞ্জে ৩৩৫০টি গভীর নলকূপ এবং ৩৯৫০টি লেট্রিন নির্মাণ করা হয়েছে।
টিউবওয়েল ও লেট্রিন পেয়ে মানুষজন এখন খুবই খুশি। চলতি বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আশা করছি।
তিনি জানান, জগন্নাথপুর উপজেলায় আরো ২৫০০ টিউবওয়েল ও ৫০০০ লেট্রিনের চাহিদা রয়েছে। একিই ভাবে শান্তিগন্জ্ঞ উপজেলায় ৩০০০ টিউবওয়েল ও ৫০০০লেট্রিনের চাহিদা রয়েছে।
পৌর শহরের কুমারখালী রোডের দিনমজুর মিরাজ আলী বলেন, লেট্রিনের অভাবে খুবই সমস্যায় ছিলাম বর্তমানে সরকারের লোকজন আমাকে একটি স্বাস্থ্য সম্মত লেট্রিন নির্মান করে দেওয়ায় আমি খুবই খুশী।
একই এলাকার মানিক মিয়া জানান, এতদিন অন্য বাড়ীর টিউবওয়েল থেকে খাবার পানি আনতাম এখন আমার বাড়ীতে একটি গভীর নলকুপ বসানো হয়েছে। আমরা খুবই উপকৃত হয়েছি। আমরা সরকার কে ধন্যবাদ জানাই।
Leave a Reply